১। প্রথমেই চাইনিজ কলম না -
ধরেন, আপনার দুই বিদেশী বন্ধু এসেছে বাংলাদেশে ঘুরতে। তারা আপনার কাছে আবদার করেছে এই দেশের খাবার-দাবার ট্রাই করতে চায়। আপনি তাদের একজনকে নিয়ে গেলেন টঙের দোকানে মামার চটপটি খাওয়াতে। আরেকজনকে নিয়ে গেলেন নামকরা কোন ভালও কাচ্চি/বিরিয়ানির দোকানে কাচ্চি/বিরিয়ানি খাওয়াতে। প্রথমজনের এমন পেট খারাপ হল, যে সে আর ভিনদেশী খাবার ট্রাই করবেনা বলে শপথ করে ফেলেছে, আর দ্বিতীয়জনের ভিনদেশী খাবার এত ভালো লেগে গেছে যে সে আরও কি কি মজার খাবার পাওয়া যায় জানতে চাইছে আপনার কাছে। এদিকে রেগুলার মামার দোকানের চটপটি খাওয়া আপনি বুঝতেই পারছেন না যে ভুলটা কই হল।
যখনই নতুন কাউকে রিকমেন্ড করি এই হবিতে, চাই সে যেনও প্রথমেই একটা ভালো এক্সপেরিএন্স পায়, তাকে ভালো ব্র্যান্ড এর জিনিস সাজেস্ট করি। এর মানে এই না, চাইনিজ কলম খুব খারাপ। কিন্তু এগুলো ঠিক বিগিনারদের জন্য না। যখন একজন নিঊ হবিস্ট ফাউন্টেন পেন ইউজ করা শুরু করে দিবে, তখন তাকে আপনি আসে পাশের চাইনিজ ব্র্যান্ড রিকমেন্ড করতে পারেন, তার কোন কোনটা হয়ত সেই ভদ্রলোকের খুবই ভালো লেগে যেতে পারে। চাইনিজ ফাউন্টেন পেনগুলোর সমস্যা হল, তাদের ফ্যাক্টরি কিউ সি হয়না বললেই চলে, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ঠিক না থাকায়, কোন কোন কলম খুবই ভালো হবে, আবার একই মডেলের কোনটা হয়ত ফল্টি থাকবে। একটু অভিজ্ঞতা বাড়লে তারপর এসব কলম ট্রাই করা উচিৎ, এতে এটলিস্ট হবির প্রতি আপনার বিতৃষ্ণা আসবেনা।
২। প্রথমেই সব ধরনের কাগজে লিখে ফেলব এমন না -
অনেকেই জীবনের প্রথম ফাউন্টেন পেন কিনতে যেয়ে খুজতে থাকেন এমন কলম যেটা দিয়ে সব কাগজ, অফিসে, স্কুলে, এমনকি পারলে বাজারের ফর্দও করা যায়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে ভালো কাগজ খুব কমই পাওয়া যায়, আপনি যে কোনও ফাউন্টেন পেনে লিখতে পারবেন এমন কাগজ হাতের সামনে নাও পেতে পারেন। এটা আপনার শুরুতেই মেনে নিতে হবে, হবিতে নতুন হলে, পরামর্শ থাকবে সেটা দিয়ে ভালো ডাইরির কাগজে লিখুন, জার্নালে লিখুন, বা বাজারে পেপারটেকের ১০০ জি এস এম কাগজ পাওয়া যায় তাতে লিখুন। এমন কলম দিয়ে হবি শুরু করুন যেগুলোর মেইন্টেইনিং সহজ। যেগুলোতে লিখে মজা পাওয়া যায়, কালির শেড দেখা যায়। ফাউন্টেন পেন দিয়ে লিখাটাকে প্রথমে হবি হিসেবে নিন। পরে যদি মন চায় তাহলে ডেইলি রাইটিঙের জন্য নিতে পারেন। কিন্তু প্রথমেই ঐদিকে ট্রাই করলে শুধু ডিজাপইন্টেড হবেন। কাগজ, কলম কালি এই তিনে মিলে লিখা হয়, এই তিন জিনিস যদি আপনার বাজারের ফর্দ লিখার উপযোগী হয় তবেই লিখতে পারবেন। তাই প্রথমে হবিটা শুরু করুন, পরে আস্তে আস্তে সবই হবে।
৩। প্রথমেই ওয়াটার প্রুফ কালি বা লারজ ইঙ্ক ক্যাপাসিটির পিছনে ছুটবেন না।
ওয়াটার প্রুফ কালি এবং লারজ ইঙ্ক ক্যাপাসিটির কলম মেইটেইনিং একটু এডভান্স। হবির শুরুতেই এই জিনিস খুজলে হবে না। বুঝলাম আপনি হয়ত স্টুডেন্ট, আপনার প্রচুর লিখতে হয়, বা আপনি অফিসের ডকুমেন্টে লিখতে চান, ওয়াটার প্রুফ কালি দরকার। কিন্তু সেটা বিগিনারস লেভেলে না হয়ে কিছুদিন পরে শুরু করুন, যখন আপনার বিগিনার লেভেলের কলমটির যত্ন আত্তি ঠিকমত নিয়ে নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে পরবেন, এবং মনে হবে যে এর চেয়ে আরেকটু বেশী কস্ট আর সময়ও আপনি এক একটা কলমের পিছনে দিতে পারবেন, তখন হবিটাকে আরেকটু এডভান্স লেভেলে নিয়ে যাবেন। এক একটা ফাউন্টেন পেন কিন্তু শুধুই একটা কলম না, এরা এক একটা জীবিত পোষা প্রাণীর মত। বিলিভ মি। এদের যত্ন আত্তি লাগে। এদের অভ্যস্ত হওয়া লাগে। এরাও রাগ অভিমান করে, সেই রাগ অভিমান ভাঙ্গাতেও হয়। (রুপক অর্থে)
প্রত্যেকটা হবিতেই বিভিন্ন স্টেইজ আছে, লেভেল আছে, শর্ট কাটে এগুলা স্কিপ করলে হবিতে আর মজা পাবেন না। সামনে আরও লিখার ট্রাই করবো। সবাইকে শুভকামনা।
Article was written for #FountainPensBangladesh
Author: Atiqur Rahman
Leave a comment