পাইলট হ্যান্ড রাইটিং কম্পিটিশান ২০২১ এ ফাউন্টেন পেনস বাংলাদেশ এর জন্য লিখবো ভেবে ক’দিন ধরে ফাউন্টেন পেন এর ওপর তথ্য খোঁজ করছিলাম, ফাউন্টেন পেন নামের একটা উপন্যাস ছাড়া তেমন কিছুই পাইনি। এরই মধ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ডেইলি স্টারে Fountain Pens and Investment শিরোনামের লেখাটা মনযোগে পড়ছিলাম। লেখা পড়তে যেয়ে মনে হলো শিরোনামের Investment শব্দটা বেখাপ্পা রকম, বর্ণনার সাথে যাচ্ছিলো না। আসলে ফাউন্টেন পেন একটা নিউরন ছোঁয়া ভালবাসা। বিশেষ করে আমার মত অতীত আশ্রিতদের মন খোরাকের সবটাই এখান থেকে আসতে পারে, আসেও আমার।
আমরা ১৯৮২ সালে এস.এস.সি পর্যন্ত কালির কলমে লিখেছি, ৭৩-৭৪ এ যখন ক্লাশ থ্রি-ফোরে পড়ছি তখন সুলেখা কালি আর সুলতান কলম নিম্ন মধ্যবিত্ত [মধ্যবিত্ত শ্রেণিটা তখনও বিকশিত হয়নি] শ্রেণির প্রধানতম রাইটিং ইন্সট্রুমেন্ট। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে উইং-সাং , হিরো, পাইলটের সাথে পরিচিতি হয়েছে, সাথে কালি ইয়ুথ,প্যালিকান। ১৯৮৪ সালে ভার্সিটিতে গিয়ে সাধের ঝর্ণা কলম হারিয়ে ফেলি, স্মার্ট বলপয়েন্ট রেডলিফ এর পাল্লায় পড়ি।
আশ্চর্যময় হলেও মনের ঝুল বারান্দাটা ফাউন্টেন ছাড়েনি,সুযোগ পেলেই এক দোয়াত কালি আর একটা খসখসে নিবের কমদামী কলম কেনা হতো। লিখতে চাইতাম কিন্তু ততোদিনে কাগজের মান ক্রমাগত পড়ে গেছে ,কালি চোয়াতো প্রায় সব কাগজেই।
আর এখনতো ডিজিটাল যুগ ,লিখা হয় ডিজিটালি। ইউভাল হারারি’র হোমোডিউস পড়েতো শংকায় ভুগি, ডিজিট না আবার লিখাও গিলে খায়! ফাউন্টেন পেন ব্যবহারকারীর সংখ্যা না বাড়লেও গত ক’বছরে বেচাকেনা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়েছে।
২০১১ সালের বিবিসির একটা জরিপে দেখেছি আমাজনে ফাউন্টেন পেন বিক্রি ২০১০ এর তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বাজারে ভাল কলমের ছড়াছড়ি, অনেক সময় দেখি দাম নাগাল হারানো। যাঁরা এ ভালবাসাটায় জড়িয়ে আছেন যেমন বিডি পেনস, পেন গ্যালাক্সি বিডি, কালি’র দোয়াত, তাঁরা সাশ্রয়ের দিকটা নোটিশ করলে ফাউন্টেন পেনের ব্যবহারকারি বাড়বে। আমি পাইলট ট্যান্ক নামের একটা কলম দিয়ে ভীষণ স্বাচ্ছন্দে লিখছি, মেট্রোপলিটনটাও লিখছে বেশ। তিনটে পারকার, একটা করে সেইলর, শেফার, হাংডিয়ান, ল্যামি স্টুডিও, হিরো কলম আছে আমার, আমি সবক’টাতেই লিখে সপ্তাহ পার করি।
আমার ফাউন্টেন পেনে লেখাটা প্যাশন, সংগ্রহ না। আমি অতীত পেরুনো মানুষদের খুব ভাবি। খ্রিস্টের জন্মের ৪০০০ বছর আগে মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় মানুষ পিক্টোগ্রাফে লিখা শুরু করে, এরপর সুমেরীয়রা সিলেবিক সিস্টেম চালু করে। প্রায় ৬০০০ বছর এর দীর্ঘ যাত্রা পার করে আমার হাতে যে ফাউন্টেন কলমটা এসেছে এর বয়েস মাত্র দুইশ বছরের কিছু বেশি। দুইশ বছরে একটা প্রযুক্তি হারিয়ে যেতে পারে কিন্তু এর সঙ্গে জুড়ে থাকা আবেগ না।
আমি এখনো তাই আমার বুক পকেটে, হাতের আঙুলে, টেবিল ক্লথের দাঁতের কোণে কালি’র ছাপ দেখি ।
পরের প্রজন্মেও ভালোলাগাটুকু জেগে থাকবার এ আয়োজনটা অনন্য।
গিয়াস উদ্দিন বাবলু
সহযোগী অধ্যাপক,গণিত বিভাগ
এম.সি.কলেজ,সিলেট
Leave a comment